ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

স্ত্রী-সন্তান মিলে শ্বাস রোধে হত্যার পর লাশ গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখে

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৩, ০৯:৩৫ রাত  

ছবি সংগৃহীত

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে নরেশ রবিদাস (৪৫) হত্যার ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে থানা পুলিশ। তাকে স্ত্রী শান্তনা রবিদাস এবং ছেলে সুজন কুমার মিলে পড়নের মাফলার দিয়ে হাত ও পা বেঁধে গলা চেপে ধরে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে মরদেহ আম গাছে ঝুলিয়ে রাখে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে তারা।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান জানান, নরেশ জুতা সেলাইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করে কসমেটিকস (চুরিমালা) সামগ্রী বিক্রি করতেন। এতে যা আয় হতো তার অধিকাংশ তিনি মাদক সেবনে ব্যয় করতেন। তিনি প্রায়শই মাদক সেবন করে মাতাল অবস্থায় বাড়ি ফিরে স্ত্রী ও সন্তানকে মারধর করতো। এতে তার স্ত্রী ও সন্তান অতিষ্ঠ হয়ে এক পর্যায়ে তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

গত ১৭ ডিসেম্বর উপজেলার আউয়ালগাড়ি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কসমেটিকসের দোকান দেয় নরেশ। দোকান শেষ করে রোববার রাতে বাড়ি ফিরে রাতের খাবার খেয়ে তিনি বাহিরে যান। ধীরে ধীরে রাত গভীর হলেও নরেশ বাড়ি না ফিরলে তার স্ত্রী শান্তনা রবিদাস এবং তার ছেলে সুজন তাকে খঁুজতে যায়।

এক পর্যায়ে গ্রামের পুর্ব দিকে তুলশী গঙ্গা নদীর মাদারতলীঘাট ব্রীজ এলাকায় গিয়ে মাদক সেবন করে মাতাল অবস্থায় নরেশকে খুজে পায় তারা। এ সময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুয়ায়ী প্রথমে ছেলে সুজন তাকে মাটিতে ফেলে বুকের উপর চরে হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে শ্বাস রোধ করে। এদিকে তার স্ত্রী শান্তনা পড়নের মাফলার দিয়ে দুই হাত ও দুই পা বেঁধে ধরে রাখে।

একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা পুনরায় বাড়িতে এসে দড়ি নিয়ে আবারও ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ পাশের আম গাছে ঝুলিয়ে রাখে। পরে সোমবার ভোরে ওই এলাকায় আম গাছে হাত ও পা বাঁধা ঝুলন্ত লাশ দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নরেশ রবিদাসের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। মরদেহ গাছের ডালে ঝুলে থাকলেও তার দুই হাত ও দুই পা মাফলার দিয়ে বাঁধা এবং পা মাটিতে লেগে থাকায় বিষয়টি হত্যাকান্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নরেশের স্ত্রী শান্তনা রবিদাস এবং সুজন কুমারকে থানায় নেওয়া হলে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করে হত্যাকান্ডের বিবরণ দেয় তারা। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, লাশ উদ্ধারের পর হত্যাকান্ডের সময় যে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে গাছে ঝুলানো হয় সেই ব্যবহৃত দড়ির বাঁকি অংশ তার বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মা ছেলে উভয়ই হত্যার দায় স্বীকার করে। মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, লাশটি উদ্ধারের পর ওই দিনই নরেশের মা লক্ষী রানী বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নরেশের স্ত্রী ও ছেলেকে থানায় নিলে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে হত্যা কান্ডের বর্ণনা দেয়। পরে ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।