ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নিজ ছেলেকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত মা র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৩, ০৬:১৫ বিকাল  

ছবি সংগৃহীত

২০১৫ সালে চাঁদপুরের হাইমচরে পরকীয়ার জেরে নিজ ছেলেকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ১নং আসামী ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার বৈঠাখালী এলাকা থেকে র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে গ্রেফতার।
 
র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র‌্যাব জনগণের কাছে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
 
গত ২৩ আগস্ট, ২০২৩ তারিখে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত হত্যায় জড়িত ৪ জনকে দণ্ডাদেশ প্রদান করে। এরই প্রেক্ষিতে বর্ণিত বিষয়ে আসামিদের গ্রেফতারে র‌্যাব গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করে। এক পর্যায়ে র‌্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল গোপন তথ্যের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামীর অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ফলশ্রুতিতে, র‌্যাব উক্ত আসামীকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
 
 
এরই ধারাবাহিকতায় সদর কোম্পানি, র‌্যাব-১১ এবং সিপিসি-৩, র‌্যাব-১০ এর অভিযানে গত ১০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ ২৩০০ ঘটিকায় ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার বৈঠাখালী এলাকা হতে খুকি বেগম (৫০), স্বামীঃ মোঃ মিজানুর রহমান খানকে গ্রেফতার করা হয়।
 
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সাথে আসামি জয়নাল গাজীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এ বিষয়ে মা ও ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্ক করে পার্শ্ববর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের মিজিবাড়ির আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তার (১৯)’কে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেন। এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউয়ের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া বিবাদ হতো। এরই মধ্যে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তারই আলোকে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমা বেগমকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে মা খুকি বেগম ছেলে আরিফের গরুর দুধে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। পরকীয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও সহযোগীদের সহযোগিতায় ছেলে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে কেটে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানান, ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গেছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে মতলব ফেরিঘাটে পার হওয়ার সময় আরিফের মৃত্যু হয়।
 
 
এ ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং- ০৫, তারিখ- ১৯(১১)২০১৫; ধারা- ৩০২/৩৪, দন্ডবিধির ১৮৬০। বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চাঁদপুর বিচার শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৩ আগস্ট ২০২৩ তারিখে ভাড়াটিয়া খুনির মাধ্যমে আপন ছেলে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মা খুকি বেগম (৫০) ও জয়নাল গাজী (৩৫)’দ্বয়কে মৃত্যুদণ্ড এবং সহযোগী দুই আসামি ইউছুফ মোল্লা (৩৬) ও মাহবুব মোল্লা (৩৮)’দ্বয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
 
আসামীর স্বীকারোক্তি মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হতে গ্রেফতার এড়াতে ঘটনার পর পরই খুকি বেগম চাঁদপুর থেকে পালিয়ে ফরিদপুর জেলায় নতুন করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং পরবর্তীতে এই ঠিকানায় ২য় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নতুন সংসার করতে থাকে এবং ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি সে পলাতক ছিল।
 
এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে একজন মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামীকে ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা র‌্যাব-১১ গ্রেফতার করেছে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অপর ১নং আসামী ভিকটিমের মা’কে গ্রেফতারের মাধ্যমে এই মামলার সাজাপ্রাপ্ত দুজন ফাঁসি ও দুজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মোট ০৪ জন আসামীকে র‌্যাব-১১ এর চৌকস গোয়েন্দা দল গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
 
আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।