ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

এবার একক ব্যবস্থাপনায় মেলা

নিউজ ডেক্স

 প্রকাশিত: জানুয়ারী ১৮, ২০২৪, ০২:০০ দুপুর  

ছবি সংগৃহিত

গোটা দেশ যখন রাজনীতি, আবহাওয়া, শিক্ষাক্রমসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনায় মুখর, তখন বাংলা একাডেমি আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ঠুকঠাক শব্দ। তাকালেই চোখে পড়বে অমর একুশে বইমেলার প্রস্তুতি। দুই অংশেই ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য—‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। আগামী ২৩ জানুয়ারি লটারির মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে প্রকাশনীগুলোর স্টল বরাদ্দের তালিকা। মূলত এর পরই স্টলগুলো আপন সূচি-শৈলীতে সাজাবেন প্রকাশনা মালিকরা। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে স্টল নির্মাণ শেষ করতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মাসব্যাপী এই বইমেলার একক আয়োজক ও ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করছে বাংলা একাডেমি।

গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিন বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে গিয়ে স্টল এবং প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় নির্মাণ শ্রমিকদের। তাদের কেউ কেউ মাটি খুঁড়ে বাঁশ গাড়ছেন, কেউ করাত দিয়ে কাঠ-বাঁশ কাটছেন, স্টলের বিভিন্ন ফ্রেমে পেরেক ঠুকছেন অনেকে, কেউ বা আবার সেই ফ্রেমের ওপর টিন লাগাচ্ছেন। সঙ্গে সমানতালে চলছে মূল মঞ্চ নির্মাণের কাজ। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ স্টলের খুঁটি গাড়ার কাজ শেষ। লটারির মাধ্যমে চূড়ান্ত হলেই ভেতরের কাঠামো নির্মাণ শুরু হবে পুরোদমে।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, ১৯৭২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ বইমেলা পরিচালনা করেছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ। পরে পরিসর বাড়ায় তৃতীয় পক্ষ বা বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সব ধরনের কাঠামোসহ কিছু কাজ করানো হতো। সে বছরগুলোতে শুধু মনিটরিংয়ের দায়িত্বে ছিল বাংলা একাডেমি। কিন্তু তৃতীয় পক্ষের বিভিন্ন অসহযোগিতা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার আগের মতো মেলার পুরো দায়িত্ব একাডেমি নিজের কাঁধে নিয়েছে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি, পুলিশ বিভাগ, মেট্রোরেল, ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। মেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংস্থায় পত্র পাঠিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। গত বছরের বিন্যাস অপরিবর্তিত রেখে গত ১১ জানুয়ারি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে কাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়। পরে বাংলা একাডেমি অংশেও স্টল তৈরি শুরু হয়।

জানা যায়, পুলিশ প্রশাসন, মন্দির কমিটি ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে মেলার প্রবেশ ও বাহির গেট পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। বইমেলা পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেশ কয়েকটি নতুন প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি স্টল বরাদ্দের লটারি। ৮ বাই ৮ বর্গফুট হিসেবে ৮০০ থেকে ৯০০ স্টলের কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। বরাদ্দ পাওয়ার পর আগামী ৩০ জানুয়ারি রাত ৮টার মধ্যে স্টল সজ্জার কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। বিস্তারিত জানাতে ওইদিন সকাল ১১টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান হবে বাংলা একাডেমি অংশের রবীন্দ্র চত্বরে। এবারও বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ফিতা কাটার পর সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে মেলা।

একাডেমি থেকে আরও জানা যায়, মাসব্যাপী বইমেলা পরিচালনা করা হবে তিন ভাগে। প্রথম ভাগে মেলার পূর্বপ্রস্তুতি, দ্বিতীয় ভাগে উদ্বোধন অনুষ্ঠান-সম্পর্কিত এবং তৃতীয় ভাগে মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বাংলা একাডেমির অভ্যন্তরীণ কমিটি বা উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এবারও শিশু-কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন, সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকবে। এ ছাড়া বরেণ্য ব্যক্তিদের জন্মশতবর্ষ, সার্ধশতবর্ষ ও দ্বিশতবর্ষ নিয়ে সেমিনার হবে। সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক আয়োজন, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, লেখক বলছি, লেখকদের সঙ্গে কথোপকথন এবং তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রচারের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, এবার কাঠামো বিন্যাসে আগেরবারের মতোই। স্পন্সরও তারাই। তবে খাবারের বিষয়ে কিছু সমস্যা ধরা পড়েছে। সে বিষয়ে আগামী ২২ জানুয়ারির মধ্যে সিদ্ধান্ত আসবে। আর প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সংখ্যা ২৩ জানুয়ারির পর জানাতে পারব।

বাংলা একাডেমি এবার একক আয়োজক কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাণিজ্যের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তৃতীয় পক্ষকে দায়িত্ব দিয়ে আর্থিক স্বচ্ছতা পাওয়া যায় না। পরে তার দায়ভার একাডেমির ওপর পড়ে। সে কারণে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে একাডেমিই বইমেলার আয়োজক হয়েছে।

২৪ ঘন্টা আপডেট নিউজ পেতে bdtribune24/বিডিট্রিবিউন২৪ এর ফেসবুক পেজ ফলো করুন