ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিএনপি পরের পাঁচ বছরের জন্য প্রস্তুতি নিক

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩, ১০:৫৫ দুপুর  

ছবি সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) আখতারুজ্জামান বলেছেন, আজকে দেশে যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হয় তাহলে, দেশ হুমকির মধ্যে পড়বে। বাইরে থেকে সমালোচনা করে আমরা নির্বাচনকে বানচাল করে দিলাম, তাতে কার কী লাভ হবে? আমি কি ক্ষমতায় যাব? ক্ষমতায় তো আসবে আর একটা পক্ষ! যারা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে অতিরিক্ত কমিশনার(ডিবি) হারুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে ডিবিতে অভিযোগ করতে এসেছিলেন বলে জানান তিনি।

রাত ৮টার পর ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তার মুখে উঠে আসে বিএনপির প্রতি আক্ষেপ, আন্দোলন নিয়ে তার সমালোচনা ও নিয়মতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে সাফাই। যদিও তিনি কখনও আওয়ামী লীগে যোগদান করবেন না বলেও দাবি করেন।

ডিবি কার্যালয়ে আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, উনি (হারুন) আমাদের এলাকার লোক, কিশোরগঞ্জে বাড়ি। সে জন্য দেখা করতে আসা, কথা বলা। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, আজকাল সাইবার অপরাধ খুব বেড়ে গেছে। যেহেতু আমিও ফেসবুকিং করি। এ রকম অনেক লোক, কোনো কারণ নেই, পলিটিকাল পয়েন্ট অব ভিউ থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসে। এটা আমি ডিবি হারুনকে বলছি যে, একটু দেখেন এটা।

আখতারুজ্জামান বলেন, আমি কাউকে মানা করছি না, সমালোচনা করো, সমস্যা নেই। কিন্তু যখন ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে ফ্যামিলি নিয়ে বাপ-দাদা নিয়ে আক্রমণ করে জবাব দিতে গেলেও আমাদের সমস্যা হচ্ছে। যেহেতু সাইবার ক্রাইম বাড়ছে, এর মিস ইউজ হচ্ছে, যদি আপনি আমার ফেসবুকটা দেখেন দেখবেন যে দেশ-বিদেশ থেকে ইস্যু নিয়ে সমালোচনা না করে সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছেন, অনেক সময় জীবনের হুমকি দিচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেকেরই অভিযোগ, আমি কেন নির্বাচন করছি? এটা একটা কারণ হতে পারে। দুই নম্বর, আমি বিএনপির লিডিং লোক। তবে আমি কেন বিএনপি ছাড়লাম? কিন্তু কেউই জানতে চায় না, আমার বিএনপিতে গত ১৫ বছর ধরে কোনো পদ নেই। এই তথ্যটা কেউ নিতে চায় না। গত দুই আড়াই বছর ধরে এতো আন্দোলন সংগ্রাম হচ্ছে, আমিও করছি৷ আমি বলে আসছি, আমাকে দলে রাখেন, পদ দেন।

তিনি বলেন, আমি তো এখন দলছুট হয়ে গেছি। আমার তো মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। চেষ্টা করতে তো হবে। মানুষ যদি আমাকে চায় তো ভোট দেবে। আমি কিন্তু এলাকায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, তাতে মনে হচ্ছে জনগণের জন্য আমাকে দরকার।

আখতারুজ্জামান বলেন, সবকিছু মিলিয়ে আমার সাপোর্ট দরকার। এই অপরাধ (সাইবার অপরাধ) তো থানাভিত্তিক হবে না। এই ক্রাইমটা দেশব্যাপী হতে পারে, ব্যক্তিগতভাবে চরিত্র হরণ করা হতে পারে, অপবাদ দিতে পারে, ব্যক্তিগত আক্রমণ হতে পারে। এই বিষয়গুলোই আমি ডিবি পুলিশকে জানিয়ে রাখলাম।

অনেকেই ফেসবুকে অভিযোগ করে বলে ডিবি প্রধান হারুন পুলিশ লীগ, আওয়ামী লীগের একজন বড় নেতা। অথচ আপনি বিএনপিতে ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের একজন সমর্থকের কাছে আসলেন। এক্ষেত্রে বিষয়টি কী এমন হচ্ছে যে আওয়ামী লীগের প্রতি আপনার কোনো সিমপ্যাথি আছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, আমরা কিন্তু পুলিশকে পাচ্ছি কোনো না কোনো দলের প্রতি অনুরাগী। আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন কিন্তু পুলিশের এমন কোনো পজিশন ছিল না। ওয়ান ইলেভেনের সময় আমরা দেখেছি, পুলিশের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। পুলিশের ধর্মই হলো যিনি ক্ষমতায় আছেন তার পক্ষে কাজ করা। এখন যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার আছে, সেজন্য সে (হারুন) যদি কোন এফিসিয়েন্টলি কোনো কিছু দমন করতে পারে, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারে তাহলে তো তাকে সবাই বলবে আওয়ামী লীগের লোক।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার আওয়ামী লীগে যাওয়ার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। এটা প্রধানমন্ত্রী নিজেও জানেন। ইহ জনমে আমি আওয়ামী লীগে যাব না। তবে এখান আমি মুজিব কন্যা বঙ্গবন্ধু কন্যার পক্ষে দাঁড়িয়ে আছি শুধুমাত্র একটি কারণে, আমাদের দেশটি আগে। আমি যেকোনো মূল্যেই চাই, নিয়মতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকুক। বিএনপিকে বলি আসেন, আমরা প্রস্তুতি নিই; আগামী পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে রাজনীতি করি। আশা করছি, আমরা ফিরে আসব।

রাজনীতি নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখেন আমার তো রাজনীতি করার বয়স আর নেই। রাজনীতি করতে গেলে সংগঠন লাগবে। জনগণ লাগে। আমি এখন জনগণের স্বার্থে দুই উপজেলার মানুষের জন্য কল্যাণের জন্য কিছু করতে চাই। যদি একটু সুযোগ পাই, আমার তো জাতীয় রাজনীতিতে যাওয়ার দরকার নেই, আমি যদি সংসদ সদস্য হতে পারি তাহলে জনগণ যদি আমাকে নির্বাচিত করে তাহলে পাঁচটা বছর আমি এলাকার মানুষকে ভালো রাখতে পারব।

আরেকটা বড় কথা, আমি একটা আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই, যেটা আজকে থেকে শুরু করেছি। সেটা হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন। সেটা করতে যদি আমার একটা পদ থাকে তাহলে আন্দোলনটা গড়ে তুলতে সুবিধা হবে, আন্দোলনটা গুরুত্ব পাবে, বেগবান হবে। আমার শেষ জীবন পর্যন্ত চেষ্টা করব, বেগম খালেদা জিয়া যেন মুক্ত মানুষ হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যু হলে তো কেউ ঠেকাতে পারব না, কিন্তু  তিনি যেন মুক্ত মানুষ হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন।