ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মেডিকেল ছেড়ে বুয়েটে এলেন অদম্য চিন্ময়

ডেস্ক নিউজ

 প্রকাশিত: অক্টোবর ০২, ২০২৩, ০১:৩৭ রাত  

ছবি সংগৃহীত

মা সবিতা দাশকে হারানোর পর যাকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন সেই বাবাকেও হারালেন ২০২০ সালে। মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে বাবা বেঁচে থাকতে হারালেন ভিটেমাটিও। তবুও আঁকড়ে ধরে রইলেন কেবল পড়ালেখাটাকে। তাতে সুফল পেলেন চিন্ময়। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই প্রথমবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন তিনি। চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ভর্তিও হলেন। কিন্তু তার প্রথম পছন্দ ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেই স্বপ্নও পূরণ হলো তাঁর। ফলে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ভর্তি বাতিল করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। পেলেন পছন্দের সাবজেক্ট মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংও। তাঁর এই সফলতায় এলাকাবাসী ও স্বজরা দারুণ খুশি।


চিন্ময় দাশের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কেলিশহর গ্রামে। তার বড় ভাই তন্ময় দাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবার স্নাতক ডিগ্রি পাস করেছেন। ছোট ভাই নিলয় দাশ (সৎ ভাই) পড়ছে অষ্টম শ্রেণিতে। প্রায় ১৫ বছর আগে তাদের মা সবিতা দাশ দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দারিদ্র্যের সংসারে ধারকর্জ শোধ করতে ভিটের জায়গাটিও বিক্রি করতে হয় বাবাকে। সেই জন্য বছর পাঁচেক ধরে নিজেদের গ্রামেই ছোট্ট দুটি পুরোনো কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতেন তাঁরা। তারপরও সুখ ছিল, চোখের সামনে বাবা উজ্জ্বল দাশ ছিলেন। ২০২০ সালে চিন্ময় এসএসসি পাসের পর ১৬ জুলাই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান দিনমজুর বাবা। এতিম হয়ে যান চিন্মম
চিন্ময় দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেডিকেল, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার খবর শুনে পুরো গ্রামবাসী অনেক খুশি হয়েছে। প্রথম আলোতে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া খবর শুনে দুই শুভানুধ্যায়ী ব্যক্তি তাকে বাড়িতে ডেকে সম্মানিতও করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। কিন্তু যে মা-বাবা পরিশ্রমে এতটুকু এসেছি, আজ তাঁরা বেঁচে থাকলে অনেক বেশি খুশি হতেন। তাঁরা আমার সাফল্য দেখে যেতে পারেননি, এটা অনেক কষ্টের।’


 ২০২০ সালে কেলিশহর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চিন্ময় দাশের পাশে এসে দাঁড়ান ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল। এই বৃত্তি সহায়তা নিয়ে এইচএসসি পড়াশোনা করে পুনরায় জিপিএ-৫ অর্জন করে সাফল্য ধরে রাখেন তিনি। তাঁর এই সফলতায় স্নাতক পর্যায়েও শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্বাচন করে এই তহবিল থেকে। এ জন্য ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
এত কষ্টের মধ্যেও ছোট ভাইয়ের এ ধরনের সফলতা দেখে বড় ভাই তন্ময় দাশ খুশিতে আত্মহারা। তন্ময় দাশ বলেন, ‘এইচএসসিতে পড়ালেখা অবস্থা থেকে বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখত চিন্ময়। তাকে সব সময় বলত সেই প্রকৌশলী হবেন। তার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে এটাই বড় পাওয়া। সেই সঙ্গে ছোট ভাইয়ের স্বপ্নপূরণে যারা সারথি ছিলেন তাদের অসংখ্য ধনবাদ জানাই