ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানে নির্বাচন, যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে নতুন সরকার

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪, ০৭:৩৫ বিকাল  

ছবি সংগৃহীত

রাত পোহালেই পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। সপ্তাহজুড়ে হামলা-বিস্ফোরণ এবং নানা রাজনৈতিক নাটকীয়তার পর আগামী বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পার্লামেন্টে নির্বাচন হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে। এদিন ভোট দিয়ে নতুন জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করবে পাকিস্তানের ১২ কোটি ৮০ লাখ ভোটার। ভোট হবে চার প্রদেশের আইনপ্রণেতাদের নির্বাচনেও।

বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় বসার সঙ্গে সঙ্গে একগুচ্ছ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে পাকিস্তানের নতুন সরকারকে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক তাদের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো কী কী-

অর্থনীতি পুনরুদ্ধার
গত গ্রীষ্মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বেইলআউটের মাধ্যমে শেষ মুহূর্তে ঋণখেলাপি হওয়া এড়ায় পাকিস্তান। কিন্তু সংস্থাটির সহায়তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মার্চ মাসে।

এ অবস্থায় নতুন সহায়তা কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা এবং সেটি দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন করা জরুরি হবে পাকিস্তানের নতুন সরকারের জন্য। একইসঙ্গে, রেকর্ড মূল্যস্ফীতি এবং ধীর প্রবৃদ্ধির সমস্যাও সামলাতে হবে তাদের।

রাজনৈতিক উত্তাপ কমানো
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার দলের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে। সাবেক ক্রিকেট তারকা গত আগস্ট মাস থেকে কারাগারে বন্দি। এটি তার লাখ লাখ সমর্থককে ক্ষুব্ধ করেছে।

গত সপ্তাহে তিনটি মামলা ইমরান খানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ কারাবাসের রায় দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও মামলা বিচারাধীন, যার মধ্যে অন্যতম সামরিক স্থাপনায় হামলার মামলা। এর অভিযোগ প্রমাণিত হলে ইমরানের মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।

পাকিস্তানে এখনো ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে ইমরান খানের। ফলে, তার ও তার দলের ওপর দমন-পীড়ন দেশটিতে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি সামলানো জরুরি হবে ক্ষমতাসীনদের জন্য।

সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাব দীর্ঘদিনের। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি আরও বেড়েছে।

সম্প্রতি স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিল নামে একটি নতুন উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থায় প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সামরিক বাহিনীর ভূমিকাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। দেশটির অনেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মরত জেনারেলরা।

নির্বাচনের পর পাকিস্তানের নতুন সরকারকে তার নিজস্ব নীতি নির্ধারণ ও প্রভাবশালী জেনারেলদের খুশি রাখার বিষয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

জঙ্গিবাদ ও বিদ্রোহ মোকাবিলা
পাকিস্তানে গত দেড় বছর ধরে জঙ্গি হামলা বেড়েছে। বিশেষ করে, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। সংগঠনটি ন্যাটো বাহিনীর রেখে যাওয়া উন্নত অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করছে বলে শোনা যায়।

জঙ্গিরা একের পর এক হাই-প্রোফাইল হামলা চালালেও আর্থিক সংস্থানের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের মতো আরেকটি বড় অভিযান চালাতে পারছে না ইসলামাবাদ।এছাড়া, দক্ষিণ-পশ্চিমের বিচ্ছিন্নতাবাদী বেলুচ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে পাকিস্তান সরকারের জন্য।

উত্তপ্ত তিন সীমান্ত মোকাবিলা
আফগানিস্তানের তালেবান এবং পাকিস্তান সরকারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইতিহাস থাকলেও টিটিপির হামলার জেরে সম্প্রতি অভূতপূর্ব টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। ইসলামাবাদ এরই মধ্যে কয়েক হাজার আফগান শরণার্থীকে বহিষ্কার করেছে, যাদের অনেকেই কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানে বসবাস করছিলেন।

গত মাসে, একে অপরের মাটিতে পাল্টাপাল্টি হামলা চালায় ইরান ও পাকিস্তান। এর জেরে কূটনৈতিক বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটে। যদিও এরপর সম্পর্ক মেরামত হয়েছে বলে দেখা যায়, তবু ইরান সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে পাকিস্তানের যে নতুন দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে, তা স্পষ্ট।


ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘাত নতুন নয়। পাকিস্তানের ভেতর এতটি হত্যা অভিযান পরিচালনার জন্য সম্প্রতি নয়া দিল্লির বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে ইসলামাবাদ। এর ফলে পুরোনো শত্রুর সঙ্গে সম্পর্ক আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।