ঢাকা, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

দরকার টেকসই সময়োপযোগি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মুখে বাংলাদেশ

এম.সাদ্দাম হোসেন (পবন)

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪, ১১:১৩ রাত  

বিশ্বে তাপমাত্রা (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) ক্রমশই বাড়ছে। এর প্রভাব বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ ও এর জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বড় বড় পরিবেশবাদী ও উন্নয়ন সংস্থাদের বিভিন্ন কেস স্টাডিতেই এর যথেষ্ঠ প্রমাণও পাওয়া গেছে। উষ্ণতার প্রভাবে খাদ্য উৎপাদন, পানি সরবরাহ, জনস্বাস্থ্য ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং জনসাধারনের অগ্রগতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ বাংলাদেশে নতুন কোন ঘটনা নয়। সহস্রাব্দ কাল হতেই চলে আসছে ভয়াবহ রুপ নিয়ে। জীবাশ্ম জ্বলানীর সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী উন্নয়ন শীল দেশ গুলোর ”প্রিন্সিপাল কনসিউমারস” সৃষ্ট গ্রিন হাউজ  গ্যাসের নির্গমণ সীমাবদ্ধতার মধ্যে রেখে পার্শ্ববর্তী অনুন্নত দেশগুলোর উন্নয়ন কর্মসূচীতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া অনিবার্য।

১৯৯২ সালে ইউনাইটেড নেশন ফ্রেম ওয়ার্ক কনভেনশন অনক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএকসিসিসি) কনভেনশনে য্ক্তুরাষ্ট্র,অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়াসহ ১শ’ ৮০টির বেশী দেশ স্বাক্ষর করে এবং অনুমোদন করে। কনভেনশনের ২নং আর্টিকেল অনুসারে এসব দেশ আবহওয়া মন্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন স্থিতিশীল রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তারা গ্যাস নির্গমন এমন একটি স্তরে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যাতে জলবায়ু নানা সিস্টেমের সহায়তায় মানব জাতির অস্তিতের জন্য কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে না পারে। এই অঙ্গীকার উপেক্ষা করে ধনী দেশগুলো সীমাহীনভাবে গ্যাস নির্গমন করে চলছে। যা ভয়াবহতার দিকে অনুন্নত দেশগুলো মারাত্মক হুমকির সমূখীন হয়েছে। ইতিমধ্যে তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু শীর্ষক নানা কনভেনশন ও তার সমাধান নিয়েও কথা হচ্ছে। বাস্তবমূখী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন এমনভাবে নিশ্চিত করতে হবে আক্রান্ত জনগোষ্ঠী তাপমাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে  চলতে পারে।দরকার আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর মতামত ভিত্তিক টেকসই সময়োপযোগি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। 

জলবায়ু সম্পর্কিত (আইপিসিসি) তৃতীয় এসেসমেন্ট অনুসারে ২০ দশকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। প্যানেলে বলা হয়, তাদের কাছে নতুন তথ্য আছে, গত ৫০ বছরে বিশ্বে  সবচেয়ে বেশী তাপমাত্রা বেড়েছে এবং এটা ঘটেছে মানুষের জন্যই। আইপিসিসি ক্লাইমেট মডেলে দেখানো হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানীর অধিক ব্যবহারে ২১০০ বছরে বিশ্বে গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৫ দশমিক ৮ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে প্রমাণ মেলে উষ্ণতা বাড়ার হার বা পরিবর্তনের গতির এমন নজির কমপক্ষে ১০ হাজার বছরের ইতিহাসেও নেই।পরিবেশবাদী ও উন্নয়ন সংস্থা এবং গবেষণা সেন্টারের মতে দ্রুত এর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া না হলে আগামী দুই দশকে সব কিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। সতর্কীকরণ নীতিমালা নিয়ে    আন্তর্জাতিক ভাবে একমত পোষন সেখানে বৈশ্বিক সমাধানের ক্ষেত্রে গ্রিন হাউজ গ্যাসের ঘনত্ব সর্বনিম্ন মাত্রায় তাপমাত্রা ২ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা বাঞ্চনীয়। দারিদ্র বিমোচন ও বিশ্বের পরিবেশ রক্ষায় জাতিসংঘ কনফারেন্সের পরিকল্পনা গ্রহনের এক দশক পর প্রাকৃতিক দূর্যোগ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মানব উন্নয়ন শেষ করে ফেলতে পারে এবং বিশ্বের অবশিষ্টাংশে বিপদ গ্রস্থ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মারাত্মক নিরাপত্তাহীন জনগোষ্ঠীর উপ প্রভাব পড়ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মানুষকে শারিরীক, মানুষিক ক্ষতিগ্রস্থ এবং গৃহহীন করে।

জলবায়ু মোকাবেলায়  বিভিন্ন উদ্যোগ গহণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মতামত নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তার বাস্তবায়নে ধনীদেশ থেকে ঋণ না নিয়ে অনুদান নেয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ নিতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদী নিরাপদ কর্মসংস্থান তৈরী করে আত্ম নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে। গত তিন দশকের অধিক সময় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার নামে ত্রান ও পূর্নবাসন,পূর্নগঠন কর্মসূচীতে আমাদের দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। যা মানুষের পরনির্ভরশীলতাকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায় অন্যদিকে সৃষ্টি হয় অনিয়ম ও দূর্নীতির । প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় বিপদ গ্রস্থ এলাকার আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর চাহিদা ভিত্তিক পরিকল্পনা তৈরী ও তার সময়োপযোগী বাস্তবায়ন। বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাদের চিন্তা ভাবনা ছিল পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন শীর্ষক প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সহনক্ষমতা শীর্ষক প্রকল্পগুলো তেমন কোন আশানুরূপ ফলাফল বয়ে আনতে পারেনি। কর্ম এলাকার জনগোষ্ঠীকে নিয়ে দূর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি, চলাকালীন প্রস্তুতি, পরবর্তী প্রস্তুতি সর্ম্পকে অতীতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা অনুমান করে বর্তমান কি ঘটবে ধারনা করে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর মতামত নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সে কারণেই প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠে নিজেরা দূর্যোগ মোকাবেলায় সফল হতে পারেনি। জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক বিশেষজ্ঞদের অভিমত, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ গ্রহন করে তার বাস্তবায়নে অধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। অনুরূপ দ্বায়সাড়া নাম সর্বস্বহীন প্রকল্প প্রনয়ন করে তার অধিকতর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা না হলে বাংলাদেশ বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পড়বে। বাংলাদেশের “জলবায়ু  পরিবর্তন প্রকল্প”গুলো সঠিক মনিটরিং এর অভাবে প্রত্যাশিত ফল বয়ে আনছে না। তাই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাদের উচিৎ- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সহায়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে উপকারভোগীদের পরিস্থিতির সাথে তাদের খাপ খাওয়ানোর কৌশল নির্ধারন করতে হবে।