পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের গ্রামের পর গ্রাম। ছবি: সংগৃহীত
বিডিটি২৪নিউজ ডেস্ক:
ভারত থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের গ্রামের পর গ্রাম। হাজার হাজার বাড়িঘরের পাশাপাশি পানি ঢুকেছে বাড়িঘর, বিমানবন্দর, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল থেকে শুরু করে বিদ্যুৎকেন্দ্রেও। সিলেট শহর থেকে শুরু করে সুনামগঞ্জ জেলা সদর, দিরাই, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে বানভাসি মানুষ। নিম্নাঞ্চলের বিত্তশালীরা আশ্রয় নিয়েছেন বাড়ির ছাদে। দরিদ্রদের আশ্রয় হয়েছে উঁচু সড়কে খোলা আকাশের নিচে। বিদ্যুৎ নেই; খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। সারাদেশের সঙ্গে বন্যার্ত এলাকার যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন। সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুই জেলার আট থানায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থগিত করা হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। ভারতের চেরাপঞ্জিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেট বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। বাকি তিন জেলার শহরের কিছু উঁচু স্থান, পাহাড়ি এলাকা এবং ভবন ছাড়া সবখানে এখন পানি। আগামী তিন দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ১৯৯৮ সালে সিলেট বিভাগে অনেকটা এমন বন্যা হয়েছিল। এর পর গত ২৪ বছর বন্যা মূলত হাওর ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৯ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা তিন দিন স্থায়ী ছিল। তবে এমন ভয়াবহতা ছিল না।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অনেক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেগুলোতে লোকজন এসেছেন। কিন্ত অনেক লোক এখনো পানিবন্দি হয়ে আছেন। নৌযান সংকটের কারণে তাদের ঠিকমতো উদ্ধার করা যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে।’
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার পৌর এলাকায় পৌর এলাকায় বাড়ি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের। পৌর এলাকার সবচেয়ে উঁচু জায়গা তার বাড়ি। শুক্রবার সকালেই তার বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। সন্ধ্যায় সেই পানি হাঁটু সমান। ফজলুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘চরম মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। এমন ভয়াবহ দুর্যোগ এর আগে এলাকাবাসীর ওপর আসেনি।’
ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সুনামগঞ্জের মিজানুর রহমান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, তার এলাকার অধিকাংশই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঘরে খাবার রান্না করার উপায় নেই। সেখানে সাহায্য পাঠানোরও কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকেই পরিবার ও স্বজনদের মোবাইল বন্ধ পাচ্ছেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, আমাদের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এখন ফাঁকা নেই। বেশিরভাগই তলিয়ে গেছে। বাকিগুলো আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর সিলেট ক্যান্টনমেন্টের জিওসি মেজর জেনারেল মো. হামিদুল হক বলেন, ‘আমাদের মোট ৯টি ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঁচ ধরনের কাজ করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা; বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা; চিকিৎসা সহায়তা; স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সীমিত পরিসরে খাদ্যসামগ্রী ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল কাদির জানান, ২৯ বছরের চাকরি জীবনে তিনি কখনই কুমারগাঁও গ্রিড লাইনে পানি উঠতে দেখেননি। তবে এবারের পানি ভয়ঙ্কর। পানি আর ৪ ইঞ্চি বাড়লেই কুমারগাঁও গ্রিড সাবস্টেশন বন্ধ করে দিতে হবে। আর এটি হলে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরের পুরোটা।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট নগরে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপনির্বাহী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, আগামী দুই দিন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
৮ উপজেলায় সেনা মোতায়েন : বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সিলেটের সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের সদর, জামালগঞ্জ, দিরাই, দোয়ারাবাজার ও ছাতকে সেনা মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের খাদ্য গোডাউন রক্ষা এবং সিলেটের কুমারগঁওা পাওয়ার স্টেশনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা : আগামী তিন দিন বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে এবং বাংলাদেশ অংশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে এমনটিই জানানো হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসাবে, শুক্রবার সকাল থেকে সিলেট বিভাগের সবকটি নদ নদীর পানি ও উত্তরাঞ্চলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। দেশের বিভিন্ন নদনদীর ১০৬টি পয়েন্টের মধ্যে ৮৬টির পানি বাড়ছে, ২০টির কমছে। অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি দ্রুত বাড়ছে। এরই মধ্যে তিস্তা অববাহিকার চারটি জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে পারে। ব্রহ্মপুত্রের পানি যমুনা দিয়ে নামার সময় তিন-চার দিনের মধ্যে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল পর্যন্ত বন্যার পানি চলে আসতে পারে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের চেরাপুঞ্জি বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা জুন মাসে ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত তিন দিনে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটিও গত ২৭ বছরের মধ্যে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
১৬ উপজেলা বিদ্যুৎহীন : সিলেট বিভাগের ১৬ উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, গ্রিডে সমস্যা হওয়ায় সুনামগঞ্জের সব উপজেলাসহ বিভাগের ১৬ উপজেলা পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে নেটওয়ার্কের সমস্যায় ঠিকমতো কাজ করছে না মোবাইল ফোনও।
কোম্পানীগঞ্জের নিম্নাঞ্চল পানির নিচে : সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জে হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে ছয়টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সবকটি গ্রামীণ সড়ক ৫/৬ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা সদরের সবকটি সড়ক ৭/৮ ফুট পানির নিচে। সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কে ৪/৫ ফুট পানিতে নিমজ্জিত।
শাবিপ্রবির ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে বন্যার পানি প্রবেশ করায় আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার সকালে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
ধর্মপাশা ও মধ্যনগরে অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দি : সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বসতঘরে পানি উঠায় বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ। কেউ কেউ স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।
কুড়িগ্রামে পানিবন্দি ৪০ হাজার মানুষ : কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সদর, উলিপুর ফুলবাড়ী, চিলমারী, নাগেশ^রী, রাজারহাট উপজেলার অন্তত ৪০ হাজার মানুষ।
তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের ৪০ পয়েন্টে নদীভাঙন : গাইবান্ধার ফুলছড়িতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা, করতোয়া, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি। ফুলছড়ির মধ্য উড়িয়া, দাড়িয়ার ভিটা, পূর্ব কঞ্চিপাড়াসহ প্রায় ২৮টি চর ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
ফুলবাড়ীতে ২ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এ নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিম্নাচঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এরই মধ্যে চরাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এসব এলাকার ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : তিস্তার পানিপ্রবাহ বেড়ে শুক্রবার বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তা নদীর তীরবর্তী লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পাশাপাশি ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে ও রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার অনেক মানুষ। তিস্তা ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়ে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ঝিনাইগাতীতে ২০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে আবারও উপজেলা পরিষদসহ ২০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে উপজেলার সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নালিতাবাড়ীতে ভোগাই নদীতে ভাঙন, ভেঙেছে ব্রিজ : শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ভোগাই এবং চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার উপও দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার পৌরশহরের উত্তর গড়কান্দা ও আড়াইআনী বাজার প্লাবিত হয়েছে। গড়কান্দা বাগানবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। পাহাড়ি ঢলে ভোগাই নদীর দুই জায়গায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। চেল্লাখালী নদীর দুটি ছোট ব্রিজ ভেঙে গেছে।
সোমেশ^রীর পানি বিপৎসীমার ওপরে : সোমেশ^রী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে বিভিন্ন ইউনিয়নের চর ও নিম্নাঞ্চল এবং ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমির ফসল। পাশাপাশি ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমি, শস্য ফসলি জমি, বীজতলাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
ভোলায় মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপরে : ভোলায় মেঘনার পানি বেড়ে বাঁধের বাইরের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপ এবং পূর্ণিমার প্রভাবে মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানির চাপে ঢালচর, চর পাতিলা, কলাতলীর চর, চরনিজাম, চরযতিন, সোনারচর ও দাসেরহাটসহ ১৫টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই বরিশালের চার নদীর পানি : বরিশাল বিভাগের চার নদীর পানি প্রতিদিন বিপৎসীমা অতিক্রম করছে। জোয়ারের সময় নদী ও এর আশপাশের চর এবং নদী তীরবর্তী এলাকা পানিতে টুইটম্বুর হয়ে যায়, আবার ভাটার সময় পানি নেমে যাচ্ছে। অপরদিকে বরিশাল নগরী ঘেঁষে বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলাসহ অন্যান্য নদীর পানিও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ : পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়ার জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌপথের নদীতে ঘাট ও সড়ক তলিয়ে গেছে। এ কারণে দুদিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
‘জাতীয় দুর্যোগপূর্ণ’ এলাকা ঘোষণার দাবি : সিলেট ও সুনামগঞ্জকে ‘জাতীয় দুর্যোগপূর্ণ’ এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেট বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জালালাবাদ ছাত্রকল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে তারা এ দাবি জানান।
খাবার ও অর্থ বরাদ্দ : বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের লক্ষ্যে ২৬ হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনিসহ যে খাদ্যসামগ্রী রয়েছে, তা পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের এক সপ্তাহ চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে নগদ টাকা ও চাল বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট জেলার অনুকূলে দুইশ টন চাল, ৩০ লাখ টাকা এবং আট হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের জন্য ৩০ লাখ টাকা এবং আট হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট। নেত্রকোনার জন্য ১০০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা এবং তিন হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবার প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কুড়িগ্রামের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা এবং এক হাজার শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট, রংপুর ও নীলফামারীর জন্য তিন হাজার করে শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: আমাদের সময়
Leave a Reply