২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটে ফ্রিজ সংযোজন শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
বিডিটি নিউজ ডেস্ক:
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ফ্রিজ সংযোজন শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে দেশে ফ্রিজ উৎপাদন পর্যায়ে সংযোজনকারী বা অ্যাসেম্বলারদের উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, এতে আমদানি ব্যয় কমাতে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি দেশীয় পূর্ণাঙ্গ ফ্রিজ উৎপাদন শিল্প খাতের অগ্রগতিও ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
গত বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতা এবং বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের ভেতর যেসব পণ্য উৎপাদন করা যায় সেগুলো বিদেশ থেকে আনা আমরা নিরুৎসাহিত করছি। দেশের ভেতরে যেসব পণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলো যদি আমাদের ব্যবহারে লাগে, তাহলে উৎপাদন আরো বাড়ানো হোক। ওই সব পণ্য বিদেশ থেকে আনা আমরা ভালোভাবে দেখি না। আমরা এভাবেই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কনসেপ্টকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
বাজেট উপস্থাপনের পর অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারি করে। এসআরওতে ফ্রিজ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এসআরও অনুযায়ী রেফ্রিজারেটরের প্রধান অংশ (মেইন পার্টস) এবং যেকোনো দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ উৎপাদন করলে কোনো প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরি-১-এর উৎপাদক হিসেবে গণ্য হবে। অন্যথায়, ফ্রিজের বডি কেবিনেট উৎপাদন করলেই (বাকিটা আমদানি করে) রেফ্রিজারেটর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরি-২ হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে অল্প বিনিয়োগ এবং লোকবল ব্যবহার করেই তারা উৎপাদকের সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
এতে যেসব প্রতিষ্ঠান বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে রেফ্রিজারেটরের সব ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরি করে, তাদের সঙ্গে সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের পার্থক্য থাকবে না। ফলে স্থানীয় রেফ্রিজারেটরশিল্পে বড় বিনিয়োগ আসবে না। দেশীয় উদ্যোক্তারা পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনমুখী শিল্পের পরিবর্তে সংযোজন শিল্প স্থাপনে বেশি আগ্রহী হবেন। এর বিপরীতে আমদানি ব্যয় বাড়বে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হবে। যেটা সরকারের শিল্পসহায়ক নীতি এবং অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার বলে অভিমত দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে যেসব পণ্যের উৎপাদন সক্ষমতা আছে এবং সামগ্রিকভাবে জনগণের চাহিদা মেটাতে সক্ষম, সেসব পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে অ্যাসেম্বলারদের সুবিধা দেওয়া ঠিক হবে না। দেখা গেছে আমার দেশে মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম এমন কোনো উৎপাদন ক্ষমতা নেই, সে ক্ষেত্রে কেউ যদি বাইরে থেকে কাঁচামাল নিয়ে আসে, এটা দোষের কিছু নয় এবং সরকার তাতে সুবিধা দিতেই পারে। পাশাপাশি এটির উৎপাদন সক্ষমতা আমাদের বাড়াতে হবে।’
অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সরকার বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। দেশের অর্থনীতির জন্যও এটি ভালো। তবে উৎপাদন ভলিউম অনুযায়ী সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অর্থাৎ যদি এ খাতে অনেক বেশি পণ্য যোগ হয়, তাহলে এক ধরনের সিদ্ধান্ত হতে পারে।
সূত্র:আমাদের সময়
Leave a Reply