ছবি-সংগৃহীত
বিডিটি নিউজ ডেস্ক:
কাতার বিশ্বকাপের দিন-ক্ষণ গণনার জন্য দুদিন আগে রাজধানী দোহার আল কর্নিশে বসানো হয়েছে কাউন্টডাউন ঘড়ি। আসরের লোগোর স্ক্রিনের মধ্যে বসানো এই ঘড়িতে মাস, দিন, ঘণ্টা, মিনিট ও সেকেন্ড দেখা যাবে।
তবে বিশ্বকাপটি কাতার আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বিতর্ক লেগে আছে। যদিও আরবের ধনী এই রাষ্ট্রের অভিযোগ, পশ্চিমারাই এই বিতর্ক উস্কে দেয়। যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবেই ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর আয়োজন করতে যাচ্ছে কাতার। চলতি বছরের ২১ নভেম্বর আসরটি মাঠে গড়াবে।
বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য নতুন করে আটটি স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে কাতার। এই স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণে প্রচুর শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে দেশটি। তবে প্রশ্ন উঠেছে. এই শ্রমিকদের সঙ্গে কি ধরনের আচরণ করা হচ্ছে। এছাড়া আসরে সমকামী সমর্থকদের স্বাগতম জানানো হবে কিনা, তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে কথা হচ্ছে।
বিশ্বকাপকে ঘিরে ৮টি স্টেডিয়াম, নতুন বিমানবন্দর, মেট্রো ও রাস্তাসহ আরও অনেক স্থাপনা নির্মাণ করছে কাতার। যেখানে নিউ সিটির মাঝখানেই আসরের ফাইনাল ম্যাচের স্টেডিয়াম, এই ভেন্যুতে আরও ৯টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রকল্পগুলোতে ৩০ হাজার বিদেশি শ্রমিক কাজ করছে, কিন্তু অভিযোগ আছে কর্তৃপক্ষ তাদের দেখভালে ঠিকভাবে নজর দিচ্ছে না।
২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, কাতার জোর করে শ্রমিকদের থেকে কাজ আদায় করে নিচ্ছে, তাদের বাসস্থানগুলো বসবাসের অনুপযুক্ত । এতে আরও বলা হয়, এখানে কাজের জন্য শ্রমিকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছেন, তাদের মজুরি আটকে রাখা হচ্ছে এবং পাসপোর্টও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
যদিও ২০১৭ সালে কাতার সরকার জানিয়েছে, অভিবাসী শ্রমিকদের অত্যধিক গরমে কাজ করা থেকে রক্ষা করতে, তাদের কাজের সময় সীমিত করতে এবং শ্রমিকদের ক্যাম্পে অবস্থার উন্নতির জন্য ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ২০২১ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের প্রতিবেদনে জানায়, শ্রমিকরা এখনও বিভিন্ন ঝামেলায় ভুগছেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম অনৈতিকভাবে মজুরি কর্তন ও দীর্ঘ সময় কঠোর কাজের জন্য মাসিক অবৈতনিক মজুরি।
এদিকে অ্যামিনেস্টি ইন্টিারন্যাশনাল জানায়, “কাফালা” বা স্পনসরশিপ বিলুপ্তির পরও অভিবাসী শ্রমিকদের তাদের নিয়োগকর্তার সম্মতি ছাড়া চাকরি ছেড়ে দিতে বাধা দেয় হয়। এছাড়া কর্মীদের ওপর বিভিন্নরকম চাপ দেওয়া হচ্ছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে লিখেছে, কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ৬ হাজার ৫০০ অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছে। যদিও এই রিপোর্টে বলা হয়নি কোন কাজ করতে গিয়ে এদের মৃত্যু হয়েছে। তবে শ্রমিক অধিকার গ্রুপ ফেয়ার স্কয়ার জানিয়েছে, বিশ্বকাপের অবকাঠামো প্রকল্প তৈরি করতে গিয়েই এদের বেশিরভাগ মারা যায়।
কাতার সরকার অবশ্য বলেছে, এই অংকটা বাড়িয়ে বা অনুমান করে বলা হয়েছে। কেননা অনেক শ্রমিকই বহু বছর এখানে থাকার পর মারা গেছে ও নির্মাণ কাজের বাইরে আছে এমন অনেকের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির তথ্য মতে, বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম তৈরির শ্রমিকের মধ্যে ২০১৪ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৩৭ জনের মৃত্যু হয়। এদের ৩৪ জনই আবার কাজের বাইরে থাকা অবস্থায় মারা যান।
কাতারের এই বক্তব্যের বিপরীতে আবার প্রতিবেদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা (আইএলও)। তারা জানায়, শ্রমিকদের হঠাৎ বা অপ্রত্যাশিত মৃত্যুগুলো কাতার হিসেবে আনেনি। এমনকি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনাগুলো দেশটি ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হিসেবে দেখিয়েছে।
আইএলও জানায়, ২০২১ সালেই কাতারে ৫০ জন শ্রমিক মারা গেছে এবং ৫০০ জনের বেশি গুরুতর আহত হয়। এছাড়া আরও ৩৭ হাজার ৬০০ জন হালকা থেকে মাঝারি আঘাত পেয়েছে। এসব মৃত্যু ও আঘাতের প্রধান কারণ ছিল উচ্চতা থেকে পড়ে যাওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা এবং পতনশীল বস্তুর আঘাত।
সূত্র-আমাদের সময়
Leave a Reply